বিড়ালের খাবার কোথায় পাওয়া যায়? বিড়ালের খাদ্যভাস এবং খাবার কেনার সময় কী কী খেয়াল রাখতে হবে?

পোষা বিড়ালের জন্য খাবারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই বিড়ালের খাবার কোথায় পাওয়া যায় তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।  তেমন বিড়ালের খাবারের পুষ্টি উপাদান, বিড়ালের খাবারের ধরন, বিড়ালের খাবারের পরিমাণ, বিড়ালের খাবারের সময় ইত্যাদি বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়। বিড়াল কে আপনার খাবারের উচ্ছিষ্ট বা নষ্ট খাবার না দিয়ে তার জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে আপনারা বিড়ালের খাবার বিষয়ে  নানা ধারণা পাবেন যা আপনার আদরের পোষা বিড়ালকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে।

 

বর্তমানে, বিড়ালের খাবার পাওয়ার ২ টা উপায় রয়েছে:

  1. পেট ফুড শপ/মার্কেট

 

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এখন পোষা প্রাণীদের খাবার সর্বত্র পাওয়া যায়। প্রতিটি জেলায়ই এই দোকানগুলো রয়েছে। এই দোকানগুলোতে বিড়ালসহ অন্যান্য সকল পোষা প্রাণীদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও সরঞ্জাম পাওয়া যায়।

  1. অনলাইন পেট ফুড শপ

 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনলাইন সার্ভিসগুলো ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। তাই পোষা প্রাণীদের খাবারের জন্যও অনলাইন বিকল্প রয়েছে। বাংলাদেশে অনেক অনলাইন পেট ফুড শপ রয়েছে যেখানে বিড়ালের খাবার সহ অন্যান্য সরঞ্জাম পাওয়া যায়। অনলাইন শপগুলোর সুবিধা হলো ঘরে বসে পছন্দের খাবার ও সরঞ্জাম অর্ডার করা যায় এবং হোম ডেলিভারি পাওয়া যায়।

বিড়ালের খাবারে যেসব পুষ্টি উপাদান থাকা প্রয়োজন


বিড়াল একটি মাংসাশী প্রাণী। তাই তাদের খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকা জরুরি। প্রোটিন বিড়ালের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

বিড়ালের খাবারে থাকা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান:

 

  • প্রোটিন: বিড়ালের খাবারে কমপক্ষে 35% প্রোটিন থাকা উচিত। প্রোটিন বিড়ালের পেশী এবং হাড়ের গঠনে সাহায্য করে।


  • ফ্যাট: বিড়ালের খাবারে কমপক্ষে 10% ফ্যাট থাকা উচিত। ফ্যাট বিড়ালের শরীরের তাপ উৎপাদন, ত্বক এবং লোম সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয়।

 
  • কার্বোহাইড্রেট: বিড়ালের খাবারে 10% এর বেশি কার্বোহাইড্রেট থাকা উচিত নয়। কার্বোহাইড্রেট বিড়ালের শরীরের জন্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।


  • ভিটামিন এবং খনিজ: বিড়ালের খাবারে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ হওয়া উচিত। ভিটামিন এবং খনিজ বিড়ালের শরীরের বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়।

বিড়ালের খাবার কেনার সময় খেয়াল রাখার বিষয়গুলো:

 
  • খাবারের গুণমান: বিড়ালের খাবার কেনার সময় অবশ্যই খাবারের গুণমান দেখে নিতে হবে। খাবারটি ভালো মানের হতে হবে এবং তাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকা উচিত।


  • বয়স: বিড়ালের বয়স অনুযায়ী খাবার নির্বাচন করতে হবে। বাচ্চা বিড়ালের খাবারে প্রোটিন এবং শক্তির পরিমাণ বেশি থাকে। বয়স্ক বিড়ালের খাবারে প্রোটিন এবং ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে।


  • শারীরিক অবস্থা: বিড়ালের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী খাবার নির্বাচন করতে হবে। অসুস্থ বিড়ালের জন্য বিশেষ ধরনের খাবার প্রয়োজন হয়।


  • খাদ্যাভ্যাস: বিড়ালের খাদ্যাভ্যাসের কথা বিবেচনা করে খাবার নির্বাচন করতে হবে। কিছু বিড়াল শুকনো খাবার পছন্দ করে, আবার কিছু বিড়াল ভেজা খাবার পছন্দ করে।

বিড়ালের খাবারের ধরন:


  • শুকনো খাবার: শুকনো খাবার বিড়ালের জন্য সহজলভ্য এবং সংরক্ষণ করা সহজ। তবে শুকনো খাবারে প্রায়ই বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে।


  • ভেজা খাবার: ভেজা খাবার বিড়ালের জন্য স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। কারণ এই খাবারে কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং বেশি পরিমাণে প্রোটিন থাকে।

বিড়ালের খাবারের পরিমাণ


বিড়াল একটি মাংসাশী প্রাণী। তাই তাদের খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রাণী প্রোটিন থাকা জরুরি। বিড়ালের খাবারের পরিমাণ নির্ভর করে তাদের বয়স, ওজন, শারীরিক অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর।

বয়স অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ

 
  • বাচ্চা বিড়াল (০-১২ সপ্তাহ): প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনে ১০০-১৫০ ক্যালোরি।

  • প্রাপ্তবয়স্ক বিড়াল (১২ সপ্তাহ-৭ বছর): প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনে ৬০-৬৫ ক্যালোরি।

  • বয়স্ক বিড়াল (৭ বছর-১০ বছর): প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনে ৪০-৫০ ক্যালোরি।

  • জেরিয়াট্রিক বিড়াল (১০ বছর বা তার বেশি): প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনে ৩০-৪০ ক্যালোরি।

ওজন অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ


  • ৩-৪ কেজি ওজনের বিড়াল: প্রতিদিন ২৪০-৩২০ ক্যালোরি।

  • ৫-৬ কেজি ওজনের বিড়াল: প্রতিদিন ৩০০-৩৯০ ক্যালোরি।

  • ৭-৮ কেজি ওজনের বিড়াল: প্রতিদিন ৩৬০-৪৫০ ক্যালোরি।

শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ

 
  • গর্ভবতী বিড়াল: প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনে ১৫০-২০০ ক্যালোরি বেশি।

  • দুগ্ধদানকারী বিড়াল: প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনে ২০০-২৫০ ক্যালোরি বেশি।

  • অসুস্থ বিড়াল: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী।

খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ


  • শুকনো খাবার খাওয়া বিড়াল: প্রতিদিন ১-২ বার।

  • ভিজা খাবার খাওয়া বিড়াল: প্রতিদিন ২-৩ বার।

খাবারের ধরন অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ


  • শুকনো খাবার: প্রতি এক কাপ শুকনো খাবারে ৩০০ ক্যালোরি।

  • ভেজা খাবার: প্রতি ৮৫ গ্রাম ভিজা খাবারে ২৫০ ক্যালোরি।

বিড়ালের খাবারের সময়

বিড়ালকে সুস্থ রাখার জন্য তার খাবারের সময় এবং পরিমাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রাপ্তবয়স্ক (১বছরের বড় হলে) বিড়ালকে দিনে দুই বেলা খাবার দেওয়া উচিত। বেশিরভাগ মানুষ সকালে এবং রাতে বিড়ালকে খাবার দেয়। তবে যদি বিড়াল কম খায় তাহলে তিন বেলা খাবার দেওয়া যেতে পারে।

খাবারের পরিমাণ নির্ভর করে বিড়ালের বয়স, ওজন এবং শারীরিক অবস্থার উপর। সাধারণত, একটি প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালের জন্য প্রতিদিন ১০০-১৫০ গ্রাম শুকনো খাবার বা ১৫০-২০০ গ্রাম আর্দ্র খাবার -যথেষ্ট।

শুকনো খাবার পরিমাণে বেশি হলে বিড়াল পরে খেতে পারে। তবে আর্দ্র খাবার পরিমাণ অনুযায়ী দিতে হবে। অবশিষ্ট খাবার সরিয়ে ফেলতে হবে। কারণ, দীর্ঘক্ষণ রেখে দেওয়া খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং তা খেলে ডাইরিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অতিরিক্ত ওজনের বিড়ালকে শুকনো খাবার না খাওয়ানো ভালো। এতে ওজন আরও বেড়ে যেতে পারে। শুকনো খাবারের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ানো জরুরি। কারণ, শুকনো খাবারে পানি থাকে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Change

Main Menu